যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনেক সময় আমরা একের অধিক সদস্যদের নিয়ে যে একাউন্ট খুলে থাকি তাই হচ্ছে জয়েন্ট বা যৌথ একাউন্ট। আমাদের প্রচলিত যে একাউন্ট গুলো খুলি, যেমন সেভিং একাউন্ট, চলতি একাউন্ট, ফিক্স ডিপোজিট, ডিপিএস স্বল্প মেয়াদী আমানত একাউন্ট ইত্যাদি।

যৌথ-ব্যাংক-একাউন্ট-খোলার-নিয়ম

এগুলোর মালিক চাইলে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুসরণ করে একাউন্ট করতে পারবেন। যেকোনো ব্যাংকে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট কিভাবে খোলা যায়। যেকোনো ব্যাংকে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম।

পেজ সূচিপত্রঃ যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট‌ কি 

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট হচ্ছে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির যৌথভাবে পরিচালিত ব্যাংক একাউন্ট। ব্যাংক একাউন্ট খোলার সময় একাধিক ব্যাক্তিকে মালিকানা করা হয় সেসব ব্যাংক একাউন্ট কে যৌথ ব্যাংক একাউন্ট বলে। যৌথ ব্যাংক একাউন্ট বলা হয়।ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসার সহ পারিবারিক এবং সামাজিক কর্মকান্ডে একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত, অর্থাৎ যৌথ অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়।  সকল সদস্যগণ যৌথভাবে ব্যাংক হিসাবের মালিক হতে পারে, অথবা প্রতিষ্ঠান বা কোন ট্রাস্ট ব্যাংক হিসাবের মালিকানা সুবিধা ভোগ করতে পারে। তবে যারা একাউন্ট পরিচালনা করবে তাদের স্বাক্ষরে টাকা জমা ও উত্তোলন করা যাবে।

যৌথ একাউন্ট খোলার নিয়ম

যৌথ নামে হিসাব খোলার সময় ব্যাংকে সাধারণ হিসাব খোলার চেয়ে একটু বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যৌথ হিসাব খোলার ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো মেনে চলতে বাংকারের বিপদে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যেকোন ব্যাংক থেকে যৌথ একাউন্ট খোলার জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে আপনারা প্রথমে ব্যাংকের কাছ থেকে যৌথ একাউন্ট এর টাকা উত্তোলন এবং টাকা রাখার ক্ষেত্রে যে সমস্ত নীতিমালা রয়েছে সকল নীতিমালা গুলো ভালোভাবে পড়ে নিবেন। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে, যেমন: সকলের ভোটার কার্ড, কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য হলে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্টস, ইত্যাদি। তারপর ব্যাংক থেকে হিসাব খোলার আবেদন পত্র, টিপি ও কেওয়াইসি ফর্ম পূরণ করে একাউন্ট করা যাবে।  অতঃপর আবেদন ফরমে সম্পূর্ণ তথ্য ও প্রতিষ্ঠানভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। সকল তথ্য সঠিক হলে অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট সময় চাওয়া হয়। তারপর যোগাযোগ করে আপনার একাউন্টটি অনুমোদিত হয়েছে কিনা জেনে নিতে পারবেন। 

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয়  কাগজপত্র

 যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য কিছু ডকুমেন্ট দরকার হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী কি কি ডকুমেন্ট লাগবে একটি যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খুলতে;

  • দুজনেরই জাতীয় পরিচয়পত্র আথবা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি জমা দিতে হবে।
  • যাদের নামে অ্যাকাউন্টটি খোলা হবে তাদের দুজনেরই রঙিন পার্সপোট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
  • আবেদনকারী গনের তথ্য পুরানসহ স্বাক্ষরিত আবেদন পত্র ব্যাংকে জমাদান।
  • সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে কোন চলতি বা সঞ্চয়ী একাউন্ট ধারীর রেফারেন্স।
  • নমিনির তথ্য ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ইউটিলিটি বিল।
  • TIN সার্টিফিকেটের কপি।
  • প্রাথমিকভাবে একাউন্ট ওপেনিং ফি জমাদান। 
আবেদন ফরমে সম্পূর্ণ তথ্য পূরন ও প্রতিষ্ঠানভেদে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে জমা প্রদান করতে হবে। সব ঠিক মতো হয়ে গেলে কয়েক দিনের মধ্যেই একাউন্টটি এ্যাক্টিভ হয়ে যাব। এবং ব্যাংক চেক বই প্রদান করবে।

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট বা কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্ট হয় তাহলে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক যথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুবিধা সমূহ।

  • একাউন্টে অংশগ্রহণকারী সকলেরই তহবিলের সমান অধিকার।
  • সহজভাবে লেনদেন পরিচালনা ব্যবস্থা।
  • প্রতিনিয়ত লেনদেনের সঠিক তথ্য জানা যায়।
  • যৌথ ব্যাংক একাউন্ট এর মালিকানাকে পৃথক পৃথক ডেবিট কার্ড এবং পৃথক পৃথক চেক বই প্রদান করা হয়।
  • যৌথ ব্যাংক একাউন্টের টাকা শতভাগ নিরাপদ। কারণ একাউন্ট ধারী ব্যক্তির একজনের অনুমতি ছাড়া বা সম্মতি ছাড়া অন্যজন ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন না।
  • আপনি একই সাথে আপনার আর্থিক লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন।
  • দুটি পৃথক অ্যাকাউন্টে ন্যূনতম গড় মাসিক ব্যালেন্স বজায় রাখার কোনো প্রয়োজন নেই।
  • আপনি যদি কোনো কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে থাকেন তবে অন্য অ্যাকাউন্ট হোল্ডার অ্যাকাউন্টটির যত্ন নিতে পারেন।

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার অসুবিধা

যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম অনুযায়ী যৌথ ব্যাংক একাউন্টে অসুবিধার থেকে নিঃসন্দেহে সুবিধা অনেক বেশি। চলুন জেনে নেওয়া যাক যথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার  অ‍সুবিধা সমূহ।

  • যদি কোনো এক অ্যাকাউন্টধারী সমস্ত অর্থ ব্যবহার করে ফেলে, তবে অন্যদের তা পুনরুদ্ধার করার কোন সুযোগ নেই।
  • একজন একাউন্ট ধারকের আর্থিক অবস্থা যৌথ অ্যাকাউন্টে থাকা অন্যান্য ধারকদের উপর প্রভাব ফেলে।
  • যেকোনো বিষয়ে দুই ব্যক্তিরই মতামত  দিয়ে এক সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে।
  • কেননা যৌথ একাউন্ট এর ক্ষেত্রে উভয়ের স্বাক্ষর ব্যতীত টাকা উত্তোলন সম্ভব নয়।

যেখানে জয়েন্ট একাউন্ট এর প্রয়োজনীয়তা

  • ব্যবসা পরিচালনা
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানিজিং কমিটির জয়েন্ট একাউন্ট প্রয়োজন পড়ে,
  • মসজিদ, মাদ্রাসা বা দাতব্য সংস্থা পরিচালনায়
  • যে কোন সামাজিক সংগঠনের লেনদেন প্রক্রিয়া করনেও জয়েন্ট একাউন্টের প্রয়োজন হয়।

পাঠকের শেষ কথা

স্বামী-স্ত্রীর সমন্বয়ে, ভাই-বোনের সমন্বয়ে কখনো বা নাবালগ সন্তানের একাউন্ট খোলার জন্য বাবা বা মায়ের সমন্বয়ে বা আইনগত অবিভাবকের সমন্বয়ে , আবার কখনো ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে অংশীদের সমন্বয়ে। যৌথ ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে উপরের আলোচনায় যদি কারো  উপকার হয়, তবেই আমার কষ্ট সার্থক। ব্যাংকিং ও অন্যান্য অনলাইন পরিষেবা পেতে ভিজিট করুন আমার ওয়েবসাইট, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url