গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ
মা হওয়ার সুখ এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ। প্রেগন্যান্সির সময় একজন মহিলার শরীরের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। এই পরিবর্তনগুলো প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড মিস হলে তখন অনেকে টের পান তিনি গর্ভবতী।
তবে জানেন কি, গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহেই শরীরে প্রকাশ পায় একাধিক লক্ষণ। পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে আপনি কিছু লক্ষণ দেখে গর্ভধারণের ইঙ্গিত পেতে পারেন। যদি এ বিষয়ে অনেকেরই জানা নেই। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে পিরিয়ড মিস না হওয়া সত্ত্বেও গর্ভধারণ করেছেন অনেক নারী।পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- মাসিক নিয়মিত ও বা বন্ধু হয়ে যাওয়া
- হালকা রক্তপাত বা স্পটিং দেখা দেওয়া
- স্তনে ব্যথা, ফোলাভাব ও সংবেদনশীলতা
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব
- ঘনঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করা
- আবেগের তারতম্য
- গন্ধে অস্বস্তি
- সকালে বমি বমি ভাব
- তলপেটে হালকা ব্যথা
- খাবারের প্রতি অরুচি
- পাঠকের শেষ কথা
মাসিক অনিয়মিত বা বন্ধ হয়ে যাওয়া
গর্ভধারণের সবচেয়ে সাধারণ ও প্রথম লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া। যদি আপনার মাসিক চক্র নিয়মিত হয়ে থাকে এবং হঠাৎ করে নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পরেও মাসিক না হয়, তাহলে এটি গর্ভাবস্থার সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে। এটি ঘটে যখন নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুতে সংযুক্ত হয় এবং তখন শরীর নতুন হরমোন নিঃসরণ শুরু করে। তবে শুধুমাত্র মাসিক বন্ধ হওয়া মানেই গর্ভবতী হওয়া নয়, স্ট্রেস, হরমোন সমস্যা বা ওজন পরিবর্তনেও মাসিক বন্ধ হতে পারে।
হালকা রক্তপাত বা স্পটিং দেখা দেওয়া
অনেক নারীর ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হালকা রক্তপাত হতে দেখা যায়, যাকে "ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং" বলা হয়। এটি সাধারণত গর্ভধারণের ৬ থেকে ১২ দিন পর ঘটে যখন নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে স্থাপন হয়।এই রক্তপাত সাধারণত গোলাপি বা বাদামী বর্ণের হয় এবং খুবই হালকা হয়, মাসিকের মতো ভারী নয়। এটি ১ থেকে ২ দিন চলতে পারে। অনেক নারী এটিকে সাধারণ মাসিক ভেবে ভুল করেন।
স্তনে ব্যথা, ফোলাভাব ও সংবেদনশীলতা
গর্ভাবস্থার শুরুতে শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। এর ফলে স্তনে ব্যথা, ফোলাভাব এবং অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে। আপনি অনুভব করতে পারেন স্তন ভারী হয়ে গেছে এবং ব্রা পরতে অস্বস্তি হচ্ছে। এই পরিবর্তন আসলে শরীরের প্রাকৃতিক প্রস্তুতি শিশুকে স্তন্যদান করার জন্য স্তনকে প্রস্তুত করছে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব
প্রথম সপ্তাহ থেকেই আপনি অনুভব করতে পারেন যেন শরীর একেবারে শক্তিহীন হয়ে পড়ছে। হরমোন প্রোজেস্টেরন বেড়ে গেলে এটি নারীর দেহে ঘুমের প্রবণতা বাড়ায় এবং ক্লান্তি তৈরি করে। এ সময় আপনি স্বাভাবিক কাজ করতেও অস্বস্তি বোধ করতে পারেন এবং দিনের অধিকাংশ সময় বিশ্রাম নিতে ইচ্ছা করবে। এটি গর্ভাবস্থার একদম সাধারণ উপসর্গ।
ঘনঘন প্রস্রাবের চাপ অনুভব করা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকেই শরীরের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায় এবং কিডনির কার্যক্ষমতাও বাড়ে, ফলে প্রস্রাব বেশি হয়। জরায়ুর বৃদ্ধি প্রস্রাবের থলির উপর চাপ ফেলতে শুরু করে, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা তৈরি হয়। বিশেষ করে রাতের বেলায় বারবার প্রস্রাব করতে যাওয়ার দরকার হতে পারে, যা অনেকের কাছে বিরক্তিকর মনে হতে পারে।
আবেগের তারতম্য
হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে যাওয়া, অকারণে কান্না পাওয়া, হাসতে হাসতে রেগে যাওয়া। এইসব আচরণ গর্ভাবস্থার শুরুর দিকের সাধারণ লক্ষণ। হরমোনের তারতম্যের কারণে নারীদের মুড সুইং দেখা দেয়। আপনি নিজেই বুঝবেন যে, আপনার আবেগে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটছে। এটি স্বাভাবিক, তবে যদি অতিরিক্ত হয়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।
গন্ধে অস্বস্তি
গর্ভাবস্থার প্রথমদিককার একটি অস্বস্তিকর ও স্বাভাবিক লক্ষণ হলো গন্ধে অস্বস্তি বা গন্ধ সহ্য না হওয়া। এই সময়ে অনেক নারী হঠাৎ করেই আগে প্রিয় কোন খাবার, পারফিউম, রান্নার গন্ধ বা এমনকি সাধারণ বস্তুর গন্ধেও বিরক্তি অনুভব করেন। এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো শরীরে হরমোন,বিশেষ করে ইসস্ট্রোজেন হরমোনের দ্রুত বৃদ্ধি, যা ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতাকে অনেক বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। ফলে সাধারণ গন্ধও তখন খুব তীব্র মনে হয় এবং তা থেকে বমি বমি ভাব বা খারাপ মেজাজ হতে পারে।
এটি এমন একটি উপসর্গ যা গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই শুরু হতে পারে এবং অনেকের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত চলতে পারে। এই সময় ঘর পরিষ্কার রাখার চেষ্টা, ঝাঁঝালো বা তীব্র ঘ্রাণ এড়িয়ে চলা, লেবু বা পুদিনার মতো সতেজ ঘ্রাণ ব্যবহার করা কিছুটা আরাম দিতে পারে। যদিও এটি কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যা নয়, তবে অতিরিক্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সকালে বমি বমি ভাব
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অনেক নারী সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব, গা গুলানো বা কখনও বমি করার প্রবণতা অনুভব করেন। একে সাধারণভাবে "মর্নিং সিকনেস" বলা হলেও এটি শুধু সকালেই নয়, দিনের যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। গর্ভধারণের পর শরীরে হরমোনের হঠাৎ বৃদ্ধি, বিশেষ করে হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই বমি ভাব দেখা দেয়। এছাড়া ঘ্রাণে অতিসংবেদনশীলতা, গ্যাসের সমস্যা বা পেটে খালি থাকা অবস্থায় এ উপসর্গ আরও বাড়ে।
সাধারণত এটি গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে বেশি দেখা দেয় এবং সময়ের সঙ্গে হালকা হতে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় সকালে ঘুম থেকে উঠেই হালকা বিস্কুট বা শুকনো খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ঘ্রাণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা এই উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
তলপেটে হালকা ব্যথা
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে তলপেটে হালকা ব্যথা বা চাপ অনুভব করা অনেক নারীর ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। এটি অনেক সময় গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ হিসেবেও দেখা যায়। এই ব্যথা সাধারণত তলপেটের নিচের দিকে হালকা টান বা চাপের মতো অনুভূত হয়, যা মাসিকের সময়কার ব্যথার সঙ্গে মিল থাকতে পারে। কারণ, গর্ভধারণের পরে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হওয়ার সময় জরায়ুতে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায় এবং হরমোন পরিবর্তনের কারণে পেশিতে টান লাগতে পারে।
আবার জরায়ু আস্তে আস্তে প্রসারিত হওয়া শুরু করে, যার ফলে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে। তবে ব্যথা যদি তীব্র হয়, অনেকক্ষণ স্থায়ী হয়, বা রক্তপাতের সঙ্গে দেখা দেয় তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে সাধারণ হালকা ব্যথা হলে চিন্তার কিছু নেই, এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া। এই সময় বেশি বিশ্রাম নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও অতিরিক্ত চাপ না নেওয়াই ভালো।
খাবারের প্রতি অরুচি
গর্ভাবস্থার প্রথমেই হঠাৎ কোনো বিশেষ খাবারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বা কোনো খাবার দেখলেই অরুচি তৈরি হতে পারে। আগে যেসব খাবার খেতে ভালো লাগতো, সেগুলো হঠাৎ অপছন্দ হয়ে যেতে পারে। আবার কিছু অদ্ভুত খাবার খেতে মন চাইতে পারে। এই আচরণ শরীরের হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয় এবং সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়।গর্ভবতী হওয়ার প্রথম দিকেই অনেক নারীর খাবারের প্রতি আচরণে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা যায়। হঠাৎ করে কোনো নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করা, যেমন টক, মিষ্টি, ঝাল বা এমনকি এমন কিছু যা আগে কখনও খাওয়া হয়নি। আবার উল্টোভাবে, আগে যেসব খাবার খুব পছন্দ ছিল, সেগুলোর গন্ধ বা স্বাদও সহ্য না হওয়া।
এই পরিবর্তন মূলত হরমোনের তারতম্যের কারণে হয়ে থাকে। গর্ভধারণের সময় শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা দ্রুত বাড়ে, যা মস্তিষ্কের ঘ্রাণ ও স্বাদের সংবেদনকে প্রভাবিত করে। ফলে মস্তিষ্ক হঠাৎ কিছু খাবারের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে এবং আবার কিছু খাবারের প্রতি বিরক্তি তৈরি করে।অনেক সময় দেখা যায়, এক নারীর ভাতের গন্ধ সহ্য হচ্ছে না, আবার কেউ কেউ কাঁচা আম বা বরই খাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। এমনটি একদমই স্বাভাবিক এবং এটি গর্ভাবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ ও পরিচিত উপসর্গ।
পাঠকের শেষ কথা
গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ গুলির মধ্যে প্রথম লক্ষণ হলো মাসিক বন্ধ
হওয়া। বমি বমি ভাব, স্তনে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, মেজাজ পরিবর্তন
হওয়া। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা ও অল্প রক্তপাত হওয়া পেট ব্যথা
হতে পারে। উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে আপনি বুঝবেন যে আপনি গর্ভবতী। অনেক
ক্ষেত্রে লক্ষণ ছাড়াও গর্ভবতী হয়ে থাকে।
আশা করছি, আমাদের এই আর্টিকেল পড়ে আপনি বুঝতে পেরেছেন গর্ভবতী হওয়ার প্রথম
সপ্তাহের লক্ষণ গুলো কি কি। এতক্ষণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল লাগলে
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করবেন। কোন মতামত থাকলে অবশ্যই জানাবেন কমেন্টে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url