বিটরুট খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা অনেক।এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ যা শরীরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিটরুট নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস থাকা জরুরী। কেননা বেগুনি রংএর এ সবজিতে লুকিয়ে রয়েছে নানা উপকারী গুন।
এতে পাবেন ম্যাঙ্গানিজ,পটাশিয়াম,ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি,ফাইবার ও এন্টি অক্সিডেন্ট। এত কিছুর কারণেই বিটরুটকে বলা হয় সুপার ফুড।
পেজ সূচিপত্র: বিটরুট খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন
- বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
- বিটরুট খাওয়ার পুষ্টিগুণ
- বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- বিটরুট কারা খাবেন না
- বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা
- বিটরুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
- পাঠকের শেষ কথা
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
বিটরুট খাওয়ার পুষ্টিগুণ
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এবং ১০০ গ্রাম বিট কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক করে তুলতে পারে।
- ডায়াটারি ফাইবার রয়েছে বিটে যা খাবার দ্রুত হজমে সাহায্য করে।
- বিটরুটে প্রচুর পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম ও কপার রয়েছে এসব উপাদান হাড় মজবুত রাখে।
- মস্তিষ্কের সুরক্ষায় এই সবজির জুরি নেই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া রোধ করতে নিয়মিত বিটরুট খান।
- ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়
- প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে বিটরুটে
- বিটরুটে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে।
- বিটরুটে থাকা ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি রেডি ক্যালসের সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম।
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- ওজন কমায়
- শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা বাড়ায়
- প্রদাহ কমায়
- অন্ত্র সুস্থ ও সবল রাখে
- মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে
- হজম শক্তি বাড়ায়
- ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়
- দীর্ঘমেয়াদি চোখের যত্নে
বিটরুট কারা খাবেন না
শীতকালে প্রচুর পরিমাণে বিটরুট পাওয়া যায়। দামও বেশ কম। বিটরুট শরীরের জন্য অনেক উপকারী হলেও একটানা নিয়মিত না খেয়ে সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ দিন খাওয়া ভালো। এটি ভীষণ পুষ্টিকর কিন্তু শরীরের কিছু সমস্যা থাকলে এটি একদম খাওয়া যাবে না জেনে নিন সে সম্পর্কে-
- যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য ক্ষতিকর কারণ এটি রক্তচাপ আরো কমিয়ে দেয়।
- অনেকের বিটরুটে এলার্জি হয়ে থাকে। যার ফলে ত্বকে ফুসকুড়ি চুলকানি জ্বালাপোড়া হতে পারে। এলার্জি সমস্যা হলে এটি খাওয়া উচিত না।
- যারা কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন তাদের বিটরুট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ডায়াবেটিস থাকলে বিট খাওয়া যাবেনা। বিটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অত্যন্ত বেশি। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাবে দ্রুত।
- তাই যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তারা বিটরুট খাদ্য তালিকায় রাখতে চাইলে অবশ্যই চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিবেন।
বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা
বিটরুট খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে। তেমন এর অপকারিতা রয়েছে। অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার আনফিলাকসিক্স হতে পারে। যার ফলে শরীরের তীব্র এলার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে লাল র্যাশ, চুলকানি, ফুলে যাওয়া, হাঁপানি, গলা শক্ত হওয়া হতে পারে। তাই যাদের অতিরিক্ত এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাঁরা বিটরুট খাওয়া পরিহার করতে পারেন।
পরিমিত পরিমান বিট খেয়ে দেখতে পাররেন। ডায়াবেটিস থাকলে বিট কোনোভাবে খাওয়া যাবে না তাই আমাদের বুঝে শুনে সবকিছু খাওয়া উচিত। যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা তাদের জন্য বিটনিক ক্ষতিকর। কারণ এটি রক্তচাপ আরো কমিয়ে দেয়। কিডনিতে পাথরে সমস্যা থাকলে বিট পরিহার করুন।
বিটরুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
স্বাস্থ্যকর খাদ্য সবার জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ কিংবা কার্যকর নাও হতে পারে। এমনকি তা কারো কারো জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই যে বিট বা বিটরুট ভিটামিন আইরন ফলিক এসিডের চমৎকার উৎস অথচ এটা সবার জন্য সমান নয়। অতিরিক্ত বিটরুটের রস পান করলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যার জন্য অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। পরিমিত খেতে হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিহার করতে হবে। নিচে বিটরুট খাওয়ার ক্ষতিকর দিক আলোচনা করা হলো-
বিটুরিয়াঃ খাবারে বিট যুক্ত রঙিন খাবার খাওয়ার পরে অনেকের লাল বা গোলাপি
রঙের প্রস্রাব হয়ে থাকে। এমন প্রস্রাব হওয়াকে বলা হয় বিটুরিয়া। যাদের শরীরে
আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই আইরনঘটিত সমস্যা
থাকলে বিট খাওয়ার পরে যদি প্রস্রাবের রং লাল বা গোলাপি হয় তাহলে বিট খাওয়া
বন্ধ করে দিন।
কিডনিতে পাথরঃ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিট অক্সালেট সমৃদ্ধ এবং
কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। বিট ইউরিনারি অক্সালেট নিঃসরণ
বাড়ায়। যা শরীরে ক্যালসিয়াম অক্সালেট পাথরের বিকাশ ঘটাতে পারে। তাই যারা
কিডনিতে পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের বিট পরিহার করা উচিত।
পেটের সমস্যাঃ বিট খেলে পেট সমস্যা হতে পারে। পেট খারাপ হওয়ার কারণ বিটে নাইট্রেট থাকে। আর শরীরে উচ্চমাত্রা হয় নাইট্রেট এর কারণে। তাছাড়া বিটের জুস পানের ফলে কেউ কেউ পেটের রোগে ভুগতে পারেন।
বিট খাওয়া উচিত নয় গর্ভাবস্থায়ঃ বিটরুটে নাইট্রেট থাকে। এই উপাদান গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। গর্ভ অবস্থায় এনার্জীর অভাব দেখা দিতে পারে। সেই সাথে মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, অনেকের চোখ পায়ের চারপাশে ত্বকের রঙ নীল হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় বিটরুট না খাওয়াই উত্তম।
লিভারের ক্ষতি হতে পারেঃ যারা অতিরিক্ত খেয়ে লিভার দুর্বল করে ফেলেছেন তাদের বিটরুট খাওয়াতে সমস্যা হতে পারে। অত্যাধিক বিটরুট ভোজনের ফলে লিভারের ধাতব আয়রন জমা হতে পারে যা লিভার কে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতিঃ অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়ার ফলে শরীরের ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। তখন শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।
পাঠকের শেষ কথা
বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা কি? এই বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি আপনি যদি বিটরুট খেয়ে থাকেন এবং এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে থাকেন তাহলে আজকেরে আর্টিকেল আপনার জন্যই। এখানে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু বিটরুট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি আপনারা এখান থেকে বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম কিভাবে খাবেন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। স্বাস্থ্য মূলক আর্টিকেল পড়ার জন্য আপনি আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। কারণ আমরা নিয়মিত স্বাস্থ্য মূলক আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url